মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ad
মাতারবাড়ী চ্যানেলের নীল জলরাশিতে বিস্ময় ব্যবসায়ীদের
ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩:৪৭ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৩

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের নীল জলরাশিতে বিস্ময় ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে। সেই নীল জলের রূপে স্বপ্ন বুনছেন ব্লু ইকোনমির। কৌতূহল ছিল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনিকে ঘিরেও।

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসেন তারা।

বেশিরভাগ অতিথিই ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, বন্দর ব্যবহারকারী, বন্দরের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কেউ এসেছেন কোস্ট গার্ডের ফেরিতে, মেটাল শার্কে, স্পিড বোটে। পাশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটি। সেই জেটিতে ভিড়েছে কয়লা ও প্রকল্পের পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসা শতাধিক বড় বড় জাহাজ।

মাতারবাড়ী বন্দরের প্রথম প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, আজ আমার জন্য আনন্দের দিন। বাংলাদেশের জন্য গভীর সমুদ্র বন্দর প্রয়োজন ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভীর সমুদ্রবন্দর করে মেরিটাইম বিশ্বে নতুন ইতিহাস গড়েছেন।

মাতারবাড়ীর যেখানে এখন কয়লা জেটি হয়েছে সে জায়গাটি ১০ মিটার নিচে ছিল। অনেক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এখন মাতারবাড়ী চ্যানেল শুধু দৃশ্যমান নয়, শতাধিক জাহাজও সফলভাবে ভিড়েছে।

বাফার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোাসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। এটি অপার সম্ভাবনাময় উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের জন্য। কনটেইনারে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে সিঙ্গাপুর, কলম্বোতে ট্রান্সশিপমেন্ট জট, সময় ও ব্যয় থাকবে না। ব্যবসায়ীরা বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে টিকে থাকতে সুযোগ চায়। সময় ও ব্যয় কমাতে চায়। প্রতিবেশী দেশগুলোর ট্রান্সশিপমেন্ট কার্গো সাপোর্ট পেলে এটি দ্রুত আঞ্চলিক হাব হবে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরিফ বলেন, মেরিটাইম বিশ্বে নতুন দিগন্ত মাতারবাড়ী। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানিকারকদের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট ইউজ করতে হবে না। ইউরোপ আমেরিকা থেকে সরাসরি বড় জাহাজ ভিড়বে মাতারবাড়ী। বড় বড় জাহাজে পণ্য ও কনটেইনার আনলে সময় ও ব্যয় কমে যায়। আমদানি রপ্তানিকারকরা এটি চায়।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের প্রথম ব্রেক ওয়াটারের মাধ্যমে নীল জলরাশির চ্যানেল দৃশ্যমান। এ চ্যানেল দিয়ে কয়লাবোঝাই বৃহত্তম সব জাহাজ জেটিতে আসা-যাওয়া করে রেকর্ড করেছে। আজ প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আমরা চাই দ্রুত টার্মিনাল তৈরি হোক।

দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রাক্বলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, সওজের ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। জাইকা, সরকার ও চবক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ০.৬ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২.২ থেকে ২.৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ি বন্দরের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলছে।

মাতারবাড়ী বন্দরকে ঘিরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ আবর্তিত হবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে ২-৩ শতাংশ অবদান রাখবে।

২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র : বাংলানিউজ