মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ad
কখন এডিস মশা কামড়ায়?
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০:৪৬ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম- ডেঙ্গু। এবার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবগ আকারে ছড়াচ্ছে। প্রতিদিনিই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটছে, সে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শত শত রোগী। 

 

রাজধানী ঢাকাতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। তবে সব মশা এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস বহনের ক্ষমতা রাখে না। সাধারণত এডিস প্রজাতির মশা এই ভাইরাসকে বহন করে বেড়ায় এবং মানুষের রক্তে প্রবেশ করিয়ে সংক্রমণ ঘটনায়। 

মশার যতগুলো প্রজাতি রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এডিস মশা। এই অনেকগুলো ভাইরাসের বাহক, যা মানুষের শরীরের সংক্রমিত হলে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু ছাড়াও ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিস এবং লিম্ফ্যাটিক ফিলারিয়াসিস ছাড়াও আরও কিছু ভাইরাসের বাহক এই এডিস। 

 

এডিস মশা দৃশ্যত স্বতন্ত্র। কারণ তাদের দেহে ও পায়ে কালো এবং সাদা চিহ্ন রয়েছে। অন্যান্য মশার মতো নয় এডিস মশা, এগুলি সক্রিয় থাকে এবং কেবল দিনের বেলায় কামড় দেয়। শীর্ষে কামড়ানোর সময়কাল খুব ভোরে এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে ও সন্ধ্যায় হয়।

সাধারণত ১৯ জায়গায় এডিস মশা বেশি বসবাস করে থাকে বলে মনে করেন থাকে কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো- পুরনো টায়ার, লন্ড্রি ট্যাংক, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, অন্যান্য জলাধার, পোষা প্রাণীর পাত্র ও নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক। 

 

এছাড়া ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান, গাছের ফোকর ও বাঁশ, দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল, পুরনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে, অঙ্কুরোদগম উদ্ভিদ, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে এডিস মশা জন্ম নেয়।

এডিস মশাই ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করে বিধায় এরা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হতে পারে। এডিস মশা সম্পর্কে মানুষের নানা ধরনের প্রশ্ন আছে। এডিস মশা দেখা যায় কি না, কখন কামড়ায়, শরীরের কোথায় কামড়ায় ইত্যাদি নানা প্রশ্ন মানুষের মনে। 

সাধারণ এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হবে না। তবে যে এডিস মশাটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করছে, সেটি কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। এডিস মাঝারি আকৃতির মশা। এটা খালি চোখে দেখা যায়। গায়ে সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে বলে অন্য মশা থেকে সহজেই আলাদা করা সম্ভব।

এডিস মশার মাথার ওপরে দুটি অ্যান্টিনা থাকে। অ্যান্টিনাগুলো লোমশ। পুরুষ মশার এন্টিনা স্ত্রী মশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ হতে দেখা যায়। এটি ভূমির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে বসে। সাধারণত দিনের বেলায় এডিস মশা মানুষকে কামড়ায়। 

 

ভোরে বা সূর্য ওঠার ৩-৪ ঘণ্টা পর এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এ মশা সক্রিয় থাকে। রাতে এরা বিশ্রাম নেয়। তখন কামড়ায় না। তবে অনেকের মতে দিনের বেলা নয়, এডিস মশা সক্রিয় হয় উজ্জ্বল আলোতে। ঘর আলোকিত থাকলে রাতেও এরা কামড়াতে পারে।

প্রচলিত আছে যে এডিস মশা শুধু পায়ে কামড়ায়। তবে কথাটি ঠিক নয়। পা অনাবৃত থাকে বলে এরা বেশির ভাগ সময় পায়ে কামড় দেয়, তবে শরীরের যে কোনো জায়গায় এরা কামড়াতে পারে। সাধারণ এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হবে না।

তবে যে এডিস মশাটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করছে, সেটি কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে সুস্থ কারও দেহে কামড় দিলে তার মধ্যে ডেঙ্গু জীবাণু প্রবেশ করার সুযোগ থাকে। তাই এডিস কামড়ালেই ডেঙ্গু হবে, তা মনে করার কারণ নেই।

জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পারে। যে পানিতে এডিস মশা ডিম দিয়েছে, সেই পানিটুকু ফেলে দিলেই ডিম ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ছাড়া সেই পানিতে তেল ঢেলে, সাবান দিয়ে কিংবা ভিনিগার মিশিয়ে ডিম ধ্বংস করা যায়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

এডিস মশার যে দুই প্রজাতি আমাদের দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের ভাইরাস বহন করে, সেগুলো হলো এডিস এজিপটি ও এডিস এলবোপিকটাস। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু রোগ দেশে দেখা দেয়ার পর আমরা কমবেশি এডিস মশার এই দুটি প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত।