বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৭ ভাদ্র ১৪৩১
ad
অলসতা: ক্যারিয়ার গড়ার পথে বড় অন্তরায়
এ টি এম মোসলেহ উদ্দীন জাবেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২:৪২ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

অলসতার বিরুদ্ধে লড়াই একটি সাধারণ এবং অবিরাম লড়াই। অলসতা অনেক ব্যক্তিকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে জর্জরিত করে। এটি ব্যক্তিগত বৃদ্ধি ও কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্র¯’ করতে পারে, এমনকি জীবনের সুন্দর সুযোগসমূহ হাতছাড়া করার দিকে ধাবিত করতে পারে। অলসতা কাটিয়ে উঠতে আত্ম-সচেতনতা, অনুপ্রেরণা এবং কার্যকারী কৌশলগুলির সমন্বয় প্রয়োজন। এখানে আমরা আপনাকে অলসতা কাটিয়ে উঠতে এবং অধিক কার্যক্ষম জীবন যাপন করতে সহায়তা করার জন্য দশটি প্রমাণিত কৌশল বিশ্লেষণ করব।

১। সুনিদ্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণঃ-
অলসতা কাটিয়ে ওঠার সর্বপ্রথম ধাপ হল সুনিদ্দিষ্ট ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা। উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে তা লক্ষ্য পূরণে অনুপ্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করে। আপনার লক্ষ্যগুলিকে ছোট ও পরিচালনাযোগ্য কাজে বিভক্ত করুন এবং একটি করণীয় তালিকা তৈরি করুন যা আপনাকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করবে।

২। একটি রুটিন তৈরি করুনঃ-
একটি দৈনন্দিন রুটিন আপনার জীবনে সুশৃঙ্খলা এবং সুন্দর কাঠামো ¯’াপন করে অলসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। একটি সু-সংজ্ঞায়িত সময়সূচী সকল কাজ, চিত্তবিনোদন এবং ব্যক্তিগত সাধনার জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে। ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য যতটা সম্ভব আপনার রুটিন অনুযায়ী কাজসমূহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।

৩। আপনার অনুপ্রেরণা খুঁজুনঃ-
যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করে, তা শনাক্ত করুন। ব্যক্তিগত পছন্দনীয় কাজ বা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অথবা আত্ম-উন্নতির আকাঙ্খা, যা-ই হোক না কেন, একটি শক্তিশালী অনুপ্রেরণা আপনাকে অলসতা কাটিয়ে উঠতে এবং আপনার কাজসমূহে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করতে পারে।

৪। কাজসমূহকে ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করুনঃ-
বড় ও দুরূহ কাজসমূহ অলসতার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এগুলিকে আরও ছোট এবং সহজে পরিচালনাযোগ্য ধাপে বিভক্ত করুন। এর দ্বারা কাজসমূহ শুধুমাত্র সহজভাবে সম্পন্ন নয় বরং প্রতিটি ধাপ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত করার সাথে সাথে আপনি কৃতিত্বের অনুভূতিও অনুভব করবেন।

৫। মনোযোগ বিঘœকারী বিষয়ব¯‘ দূর করুনঃ-
মনোযোগ বিঘœকারী বিষয়ব¯‘ অলসতার একটি সাধারণ উৎস। আপনার চারপাশের পরিবেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মনোযোগ বিঘœকারী বিষয়ব¯‘গুলি শনাক্ত করুন এবং তা অপসারণ করুন, উদাহরণস্বরূপ- আপনার ফোনের বিজ্ঞপ্তিগুলি বন্ধ করা, সময়-বিনষ্টকারী ওয়েবসাইটগুলি বল্ক করা। অন্যথায় একটি শান্তিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র খুঁজুন।

৬। “দুই মিনিট” নিয়ম ব্যবহার করুনঃ-
যদি কোনো কাজ সম্পন্ন করতে দুই মিনিট বা তার কম সময় লাগে, তাহলে তা অবিলম্বে সম্পন্ন করুন। এই সাধারণ নিয়মটি কোনো কাজ বিলম্ব হওয়া প্রতিরোধ করে এবং আপনাকে সারাদিন কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৭। নিজেকে পুরস্কৃত করুনঃ-
কাজগুলি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করা একটি শক্তিশালী প্রেরণা হতে পারে। লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য নিজেকে ছোট কিছু পুরষ্কার অফার করুন; যেমন- একটি ট্রিট, একটি বিরতি বা কিছু অবসর সময়। এই ইতিবাচক পদক্ষেপ মনোবলবৃদ্ধির মাধ্যমে অলসতার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরভাবে লড়াই করতে পারে।

৮। দায়বদ্ধ থাকুনঃ-
আপনার লক্ষ্য এবং অগ্রগতি আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা সহকর্মীদের সাথে ভাগাভাগি করুন যারা আপনাকে দায়বদ্ধ রাখতে পারে। কেউ আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন -এটা জানা থাকা, আপনার অলসতা কাটিয়ে ওঠা এবং প্রতিশ্রæতি পূরণ করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক উদ্দীপনা প্রদান করতে পারে।

৯। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুনঃ-
মানসিক চাপে নিমজ্জিত হওয়ার অনুভূতি, অলসতার দিকে ধাবিত করতে পারে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলি যেমন- ধ্যান, যোগব্যায়াম অথবা শারীরিক ব্যায়াম আপনার রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন যেন মানসিক চাপ এড়ানো যায় এবং মানসিক শক্তি ও শারীরিক সু¯’্যতার মাত্রা বজায় রাখা যায়।

১০। ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করুনঃ-
সর্বশেষে, বোঝার চেষ্টা করুন যে- বিপত্তি এবং ব্যর্থতা যেকোন যাত্রার একটি স্বাভাবিক অংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হলে অলসতার কাছে নতি স্বীকার না করে, ব্যর্থতা থেকে নতুন কিছু শেখার এবং ব্যর্থতাকে নতুন করে বেড়ে ওঠার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করুন। প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠা আপনাকে আরও প্রাণবন্ত এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলতে পারে।

অলসতা কাটিয়ে ওঠা এমন একটি যাত্রা যার জন্য প্রয়োজন আত্ম-সচেতনতা, প্রেরণা এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ, রুটিন প্রনয়ণ এবং ব্যবহারিক কৌশল প্রয়োগ করে, আপনি সফলভাবে অলসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন এবং আরও ফলপ্রসূ জীবনযাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন এটি একটি প্রক্রিয়া, অতএব বিপত্তি স্বাভাবিক। আপনার লক্ষ্যগুলি পূরণে মনোযোগী থাকুন এবং ধীরে ধীরে অলসতা কাটিয়ে উঠতে ও আপনার পছন্দসই ফলাফল অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যাস গড়ে তুলুন।