চলতি অর্থবছর শেষ হতে আরও ২৬ দিন বাকি। এই ১১ মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর শেষ হলে আগের বছরের তুলনায় কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়বে। এতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সরবরাহ সংকটে বিগত বছরগুলোয় নেতিবাচক চিত্র দৃশ্যমান হলেও চলতি অর্থবছরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রবাহ গতিশীল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি পরিবহন বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই-মে) এ বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭টি। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩টি। এর মধ্যে গত মে মাসে ৩ লাখ ১৯৩টি কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) পরিবহন হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের ইতিহাসে মাসভিত্তিক হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ। শুধু কনটেইনারই নয়, বন্দরে বেড়েছে কার্গো পরিবহনও। চলতি অর্থবছরে গত মে মাসেই চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ কোটি ১১ লাখ কার্গো পরিবহন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর চেয়ে বেশি কার্গো পরিবহন হয়েছিল গত মার্চে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার। তবে অর্থবছরের ১১ মাস হিসাব করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার। গত অর্থবছরে একই সময়ে (২০২২-২৩) মোট কার্গো (কনটেইনার পণ্য ও কনটেইনারবিহীন পণ্য) পরিবহন হয়েছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার।
বন্দরের পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি, কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ-টার্মিনালের পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা হিসাব করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত মে মাসে বন্দরে ৩ লাখ ১৯৩টি কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) পরিবহন হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি হওয়া সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৯ হাজার কনটেইনার এবং রপ্তানি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৫৬টি। আমদানি ও রপ্তানি আলাদাভাবে বিবেচনায় নিলেও গত মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। চলতি জুনেই অর্থবছর শেষ হবে। তাই আরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের শিল্প-মালিকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশে ডলার সরবরাহ সংকটে দুই থেকে আড়াই বছর ধরে আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন ঋণপত্র খুলতে আগের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণে না পড়ায় আমদানিতে ইতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে সংকট এখনও রয়েছে। একই পণ্য একাধিক আমদানিকারককে অনুমোদন না দিয়ে নিয়মিত আমদানিকারকদের সুয়োগ দেয়া, অপরিহার্য নয় এমন পণ্যের ঋণপত্র খোলায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ রেখে শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মতো পণ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রাখতে হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম চেম্বারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে আলাপকালে বৃহৎ পরিসরে বন্দর ব্যবহার করছে বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও সড়কে মাত্র ১৩ টন পণ্য পরিবহন করার নিয়ম নেই। শুধু আমাদের চট্টগ্রামে আছে। অথচ দেশের কোথাও এ নিয়ম নেই। আপনি ভারত ও পাকিস্তানে দেখেন তারা ২৪-২৫ টন পরিবহন করছে। এতে আমার পণ্য পরিবহনে গাড়ি বেশি লাগছে। তাই কস্ট অব বিজনেস ডুয়িং বাড়ছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ১০ লাইনে উন্নত করে দিয়ে শুধু পণ্য পরিবহনে এক্সপ্রেসওয়ে করে দিলে আমাদের ৫০ শতাংশ পরিবহন খরচ কমে যাবে।’