মেরিটাইম প্রফেশন শব্দটা একটা ওয়াইড রেঞ্জ কভার করে। বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক থেকে শুরু করে অফ-শোর ইন্ডাস্ট্রি, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে, ফিশিং জোন সার্ভে, ইনল্যান্ড রিভার ট্রান্সপোর্ট সবই মোটামুটি মেরিটাইম খাত তথা মেরিটাইম প্রফেশনের আওতায় চলে আসে। আজকের এই লেখায় তুলে ধরব বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক প্রফেশনের কথা, যারা সি-ফেরার, মার্চেন্ট মেরিন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি নামে সাধারণভাবে পরিচিত।
বাংলাদেশে নাবিক প্রফেশনে যাওয়া যায় দুইভাবে। একটা এসএসসি পাশের পর, আরেকটা এইচএসসি পাশের পর।
ক্রু/রেটিংস
এসএসসি’র পর যারা যায় তারা শিপের ক্রু বা রেটিংস হিসেবে চাকরি করে থাকেন। অফিসারদের তত্ত্বাবধানে শিপে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে। অনেক ক্রুরা আছেন যারা পরে নিজের যোগ্যতা এবং ইচ্ছাশক্তির বলে অফিসার/ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও প্রমোশন লাভ করেন। এর জন্য তাদের পড়াশোনা করে, পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। তবে পথটা মোটেও সহজ নয়। বাংলাদেশে দুটি প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে এবং আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে রেটিংস প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যেই পদগুলোর জন্য তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে সেগুলো হল ডেক এবং ইঞ্জিন রেটিং, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, ফিটার-কাম-ওয়েল্ডার, স্টুয়ার্ড রেটিং, কুক রেটিং ইত্যাদি। এই প্রশিক্ষণগুলো অফিসিয়ালি ৬ মাস মেয়াদী হয়ে থাকে।
অফিসার ক্যাডেট
এইচএসসি পাশের পর অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন ভর্তি পরীক্ষা হয়, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের মেরিন অ্যাকাডেমিগুলোর জন্য একটা ভর্তি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষাটা হয় মেডিকেল স্টাইলে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সরকারি (ছয়টি) কিংবা বেসরকারি (তিনটি) যেকোনো মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হতে গেলে আগে এই পরীক্ষায় পাস করে তারপর যেতে হবে। পাস নম্বর ৪০%। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ক্যাডেট তার অ্যাকাডেমি চয়েজ দিতে পারবে। এরপর মেধাক্রম অনুযায়ী এসব অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাবে। এই ট্রেনিংয়ে নাম প্রি-সি ট্রেনিং। দুই বছরের ট্রেনিং শেষে যে সনদটা একজন ক্যাডেট লাভ করে সেটার নাম সিডিসি বা কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট। এটা হচ্ছে শিপে যাওয়ার টিকেট। সিডিসি পাওয়ার পর একজন ক্যাডেট জাহাজে যাবে এক বছরের হাতে কলমে প্র্যাক্টিকাল ট্রেনিংয়ের জন্য। জাহাজে তখন তার র্যাংক হবে অফিসার ক্যাডেট/ক্যাডেট ইঞ্জিনিয়ার। এই ক্যাডেটশিপটা পেইড অর্থাৎ ক্যাডেট এখানে কিছু বেতন পাবে কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী। এক জাহাজে একইসাথে ১১ মাসের বেশি থাকার সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে। মাঝে মাঝে নিয়মের ব্যত্যয়ও ঘটে। তবে সাধারণত এই ক্যাডেটশিপ ১২ মাস শেষ করার জন্য দুটো জাহাজ করা লাগে।
ক্যাডেটের জাহাজে কাটানো সময়টাকে বলা হয় সি টাইম। ১২ মাস বা ৩৬৫ দিন সি টাইম করার পরে একজন ক্যাডেট ক্লাস-৩ সিওসি পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত হন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন অফিসার/ইঞ্জিনিয়ার সনদ লাভ করবেন। এবং পরে অফিসার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে চাকরি করতে পারবেন।
লেখক: ৫১তম ব্যাচ, বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি।