নাম গ্রিনল্যান্ডের হাঙর হলেও শুধু গ্রিনল্যান্ডেই থাকে না। ক্যারিবিয়ান সাগরেও দিব্যি খেলে বেড়ায় তারা। বরফশীতল সাগর, মহাসাগরের গভীরেই তাদের চলাচল। সূর্যের মুখ দেখতে তারা সাঁতরে উপরে ওঠে না সাধারণত। সাধারণত মাইনাস ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকতে পছন্দ করে।
মানুষের কাছে বহু বছর পর্যন্ত অজানা ছিল তারা। ১৯৯৫ সালে প্রথমবার এই হাঙরের ছবি তুলতে সক্ষম হন গবেষকরা। তারও ১৮ বছর পর প্রথমবার এই প্রাণীর ভিডিও ধরা পড়ে।
গ্রিনল্যান্ডের হাঙর যখন পূর্ণবয়স্ক হয়, তখন তাদের আকার হয় সাদা হাঙরের মতো। তার পরেও সাদা হাঙরের সঙ্গে অনেক পার্থক্য রয়েছে গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম সমনিওসাস মাইক্রোসেফালাস। কয়েকশ বছর বাঁচে এই হাঙর। আর অন্তত দেড়শ বছর বয়স না হলে সঙ্গম করতে পারে না।
গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের পেশিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন। তাই এই মাছ খেলে মারাত্মক নেশা হতে পারে। এই মাছ শিকার করে তাই রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তার পরেই খাওয়া যায়।
গ্রিনল্যান্ডের এই হাঙর নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী পিটার জি বুশনেল। তিনি জানিয়েছেন, এই পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে, তার মধ্যে সম্ভবত সব থেকে বেশি বছর বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর। বুশনেলের দাবি, ৪০০ বছর বা তার বেশি সময়ও বাঁচতে পারে এই হাঙর।
কোনো গ্রিনল্যান্ডের হাঙর যদি স্বল্প সময়ও বাঁচে, তা হলেও তা ২৭২ বছরের কম নয়। বাওহেড তিমি গড়ে ২১১ বছর বাঁচে। তার থেকেও বেশি বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর।
বিজ্ঞানীদের দাবি, একটি হাঙরের ১৫০ বছর বয়স না হলে সে সঙ্গমে সক্ষম হয় না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গভীর সমুদ্রে বিচরণকারী বেশির ভাগ প্রাণীই বহু বছর বাঁচে। ঠান্ডার কারণেও তাদের আয়ু বাড়ে। বহু বছর বাঁচে বলে তাদের প্রজনন ক্ষমতা আসে অনেক বয়সে। যেমন গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের ক্ষেত্রে হয়েছে।
শত শত বছর বেঁচে থাকলেও গ্রিনল্যান্ডের হাঙর কিন্তু বিপজ্জনক নয়। মানুষকে আক্রমণ করেছে বলে প্রমাণ পাননি গবেষকরা। স্থানীয়রা অনেক সময় দাবি করেন, মাছ ধরার ছোট নৌকা (কায়াক) দেখলে হামলা করে তারা। তবে গবেষকরাই এই দাবি মানেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, মানুষ আক্রমণ না করলে এই হাঙর হামলা চালায় না।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের হাঙর খুব ভাল ডুবুরি। ২২০০ মিটার পর্যন্ত গভীরে চলে যায় তারা।
গবেষকদের অনেকেই গ্রিনল্যান্ডের হাঙরকে সমুদ্রের শকুন বলে থাকেন। তার কারণ এদের খাদ্যাভ্যাস। এমন কোনো খাবার নেই, যা এই হাঙর খায় না। মূলত সিল আর মাছ খায় তারা। তবে সেসব না পেলে যে প্রাণী পায়, সব কিছরই মাংস খায় এরা। কোনো কিছুই ফেলে দেয় না। অনেক গবেষকই মনে করেন, সব কিছু খেতে পারে বলেই এরা শত শত বছর বেঁচে রয়েছে। কোনো দিন খাবারের অভাবে ভোগে না।
সূত্র : আনন্দবাজার।