মানবদেহে থাকা তিন ধরনের রক্ত কণিকার মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারটি হলো প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা। প্লাটিলেটের মূল কাজ হল রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। শরীরের কোথাও কেটে গেলে প্লাটিলেটের কারণেই দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। আর ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তাহলে রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করা। যদিও ডেঙ্গু ছাড়া অন্যান্য অনেক কারণেই রক্তে প্লাটিলেট কমতে থাকে।
কি কারণে কমে প্লাটিলেট চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত দুটি কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। প্রথম কারণটি হলো রক্তে প্লাটিলেট দ্রæত ধ্বংস হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণটি হলো রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্লাটিলেট তৈরি না হওয়া।
এ ছাড়া নানারকম রোগে যেমন, অ্যানিমিয়া, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, লিউকেমিয়া ইত্যাদি কারণে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
প্লাটিলেটের স্বাভাবিক পরিমাণ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরে প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। দেড় লাখের নিচে নামলেই বুঝতে হবে কোন সমস্যা হয়েছে। আর ৫০ হাজার থেকে ২০ হাজারের নিচে নামলে অতি দ্রæত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
প্লাটিলেট কমার লক্ষণ ১. শরীরের যেকোনো স্থান থেকে ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে ত্বকে বেগুনি রঙের দাগ দেখা দেয়।
২. ত্বকে ছোট ছোট লাল রঙের র্যাশ হওয়া।
৩. প্লাটিলেটের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে গেলে মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
৪. প্রস্রাব বা মলের সাথে রক্তপাত হতে পারে।
৫. শরীরের কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হয়, রক্ত দেরিতে জমাট বাধে ইত্যাদি।
৬. অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব হওয়া।
৭. মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
৮. প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনও প্রকার আঘাত ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায় প্লাটিলেট কমে গেলে পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ ও সুষম পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
১. মিষ্টি কুমড়া এবং এর বীজে থাকা ভিটামিন ‘এ’ রক্তে প্লাটিলেট তৈরিতে সাহায্যে করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উপকারী।
২. পেঁপে পাতাতে অ্যাসিটোজেনিন নামে একটি অনন্য ফাইটোকেমিক্যাল থাকে, যা প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রæত বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফ্লেভানয়েড ও ক্যারোটিনও থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (প্রদাহনাশক) হিসেবেও কাজ করে। ৪/৫টা পেঁপে পাতাকে পানিতে ফুটিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় এক কাপ করে পান করুন।
৩. লেবুর রসে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ায়। এ ছাড়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাই ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবু শরবত খাওয়ানো উচিত।
৪. আমলকীতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । আমলকী খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৫. ডালিম ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে। যা রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে এবং শরীরের দুর্বলতা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে তাকে নিয়মিত ডালিমের জুস খেতে দিন।
৬. প্লাটিলেট অতিরিক্ত কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
৭. প্রয়োজনে যেসব হাসপাতালে প্লাটিলেট সঞ্চালন ব্যবস্থা আছে সেসব হাসপাতালে খোঁজ রাখা উচিত।