রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ad
চট্টগ্রাম থেকে ৩৬ গন্তব্যে ভাড়া কমানোর তাগিদ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১:২১ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজের পরিচালনা ও মনিটরিং এর ব্যাপারে নয়া পদক্ষেপের পর ভাড়া কমানোর তাগিদ জোরালো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া কমানোর দাবি উপেক্ষিত হলেও আমদানিকারকেরা বলছেন, নতুন উদ্যোগে সবকিছু ঢেলে সাজানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে ভাড়ার ব্যাপারটি সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত। ভাড়ার উপর পণ্য মূল্য এবং দেশের ভোক্তা পর্যায় সরাসরি জড়িত থাকায় জাহাজ ভাড়া কমানো হলে দেশের সাধারণ মানুষই উপকৃত হবে। সিরিয়ালের বাইরে কম ভাড়ায় জাহাজ পরিচালনা করা গেলে সিরিয়ালভুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কেন ভাড়া বাড়বে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে বছরে প্রায় দশ কোটি টন পণ্য পরিবাহিত হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানার মালিকদের আমদানিকৃত দুই কোটি টনের মতো ক্লিংকার ছাড়া বাকি পণ্যের একটি বড় অংশ ডব্লিউটিসির মাধ্যমে সিরিয়ালভুক্ত জাহাজে পরিবহন করা হয়। জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নিয়ন্ত্রণে জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারকের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা ব্যবস্থায় এই বিপুল পরিমান পণ্য পরিবাহিত হয়। ডব্লিউটিসি পণ্য এবং গন্তব্য ভেদে জাহাজ ভাড়া নির্ধারণ করে গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনা করছে। ডব্লিউটিসি বিভিন্ন সময় জ্বালানি তেলের মূল্য এবং শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণ দেখিয়ে জাহাজ ভাড়া বাড়িয়েছে। আমদানিকারকেরা বলেছেন, গত দশ বছরে ডব্লিউটিসি ১৭৫ শতাংশ জাহাজ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে জাহাজ মালিকেরা লাভবান হলেও আমদানিকারক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডব্লিউটিসি ভাড়া বাড়ালেও বহু জাহাজ মালিক গোপনে সিরিয়ালের বাইরে মাইনাস–১৫০ মাইনাস–২০০ প্রভৃতি উল্লেখ করে কম ভাড়ায় জাহাজ পরিচালনা করে আসছিল। মাইনাস মানে ডব্লিউটিসি নির্ধারিত ভাড়া থেকে টন প্রতি ১৫০/২০০ টাকা কম। ডব্লিউটিসি যে ভাড়া সাড়ে ৬শ টাকা আদায় করেছে সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে সেই একই পণ্য ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় জাহাজ মালিকেরা পরিবহন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারকেরা বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সম্প্রতি জাহাজ মালিকদের একটি সংগঠন বের হয়ে আলাদা সেল গঠন করে। ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে এই সংগঠনের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও তারাও ডব্লিউটিসির হারেই ভাড়ার হার নির্ধারণ করে জাহাজ বরাদ্দ দিচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামের একাধিক শীর্ষ আমদানিকারক বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে দেশের ৩৬টি গন্তব্যে লাইটারেজ জাহাজ পণ্য পরিবহন করে। এই জাহাজ যে বাড়তি ভাড়া আদায় করে তার প্রমাণ হচ্ছে ‘মাইনাস’ ফর্মুলায় জাহাজ পরিচালনা। নয়া সংগঠনের পর আমদানিকারকেরা ভাড়া কমবে এমন একটি আশা করলেও তাতে গুড়েবালি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। একজন আমদানিকারক বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আলাদা সেল গঠিত হওয়ায় আমরা মনে করেছিলাম প্রতিযোগিতামূলক একটি দর নির্ধারিত হবে।

যাতে ডব্লিউটিসিও একচেটিয়া ভাড়া আদায়ের চলমান প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে। কিন্তু পরস্পর বিরোধী দুইটি সংগঠনই একই হারে ভাড়া নির্ধারণ করায় সাধারণ আমদানিকারকদের জিম্মিদশার অবসান ঘটলো না। দুই সংগঠনের বাইরে চোরাগুপ্তাভাবে যারা জাহাজ পরিচালনা করছেন তারাই আমদানিকারকদের বেশি স্বস্তি দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন একজন আমদানিকারক।

অপর একজন আমদানিকারক বলেছেন, লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের মধ্যে দেখা দেয়া বিরোধ মীমাংসায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী শিল্পপতি এবং আমদানিকারকেরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। বৈঠক থেকে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনকেই একই সিরিয়াল থেকে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সংগঠনের ছয়জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৭ সদস্যের একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা প্রদান করে। এই সেলই জাহাজের সিরিয়াল থেকে শুরু করে সবকিছু পরিচালনা করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে করে ডব্লিউটিসির বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভাড়া কমানোর ব্যাপারটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে জাহাজ ভাড়া অত্যধিক বলে মন্তব্য করে তারা বলেন, লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনার জন্য নেয়া এই নয়া উদ্যোগের সাথে ভাড়ার ব্যাপারটি সামিল করা হলে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

সেঞ্চুরি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম সিরাজুল ইসলাম জাহাজভাড়া অত্যধিক বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘মাইনাস’ ফর্মুলা বহুদিন ধরে চলে আসছে। এখন এই ‘মাইনাস’ ফর্মুলাকে বেস ধরে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করার মোক্ষম সুযোগ এসেছে। নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাহাজ ভাড়ার ব্যাপারটি সহনীয় করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলম এর সাথে আলাপকালে বলেন, সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে যেহেতু কম টাকায়ও পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে তাহলে সিরিয়ালে আসলে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে কেন? মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কাউকে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, ভাড়া কমানোর যে দাবি আমদানিকারকেরা করছেন তা খুবই যৌক্তিক। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।