বিহার আর উত্তরপ্রদেশের মাঝামাঝি এক জায়গায় থেকে আসা লোক দিল্লিতে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করছেন দু যুগ ধরে। সেদিন আমাকে সে জানালো, ‘তার বারো বছর বয়সী এক বাচ্চার ‘মাতা’ হয়েছে।’ মাতা হয়েছে, ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। জিজ্ঞেস করলাম, মাতা হয়েছে মানে কী?
বলল, ‘বাচ্চার সারা শরীরে গুঁড়িগুঁড়ি কিছু হয়েছে, মুখেও হয়েছে, কিছু খেতে পারছে না।’ আমি বললাম, মিজলস বা চিকেন পক্স হয়েছে মনে হচ্ছে।
সে মাথা নেড়ে বললো, ‘ওসব কিছু হয়নি, মাতা হয়েছে।’ বলল, ‘বাড়ির কারও আচার-আচরণে মাতা অসন্তুষ্ট হয়েছে অথবা মাতার পুজো টুজো ঠিক ঠিক করা হয়নি। সে কারণে বাচ্চার শরীরে মাতা এসে বসেছে।’
তো এখন কী করতে হবে? বাচ্চাকে আলাদা রাখতে হবে, আর বাড়ির সবাইকে এমন খাবার খেতে হবে, যে খাবারে কোনও তেল বা ফোঁড়ন দেওয়ার ব্যাপার নেই। মাছ-মাংসের তো প্রশ্ন ওঠে না, শুধু চাল-ডাল-সবজি জলে সেদ্ধ করে খেতে হবে ৭ দিন।
বহুবার অনুরোধ করলাম ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে, সে যাবে না। বললো, ‘ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল।’ ডাক্তার বলে দিয়েছে, “তাদের কিছু করার নেই, এ মাতা, মাতারানি।” প্রতিদিন মাতারানিকে পুজো দেওয়া হচ্ছে, ৭ দিন পর আবার দেওয়া হবে, তবেই মাতা দূর হবে শরীর থেকে।’
লোকটি স্মার্ট ফোন কিন্তু ভালো চালায়। আরেকজন মোটামুটি শিক্ষিত, গ্র্যাজুয়েট, পুলিশে চাকরি করে, সেও স্মার্টফোন ভালো চালায়। তাকে জানালাম পুরো ব্যাপারটা। ভেবেছিলাম সে বোধহয় ধমকে ড্রাইভারকে বলবে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে, ওষুধপত্র খাওয়াতে, সঠিক চিকিৎসা করাতে। কিন্তু না, ‘সেও বললো, এ তো মাতা।’
আরেকজন, মাস্টার্স পাস করেছে, ভালো ব্যবসা করে। শুধু স্মার্টফোন ভালো চালায় তা নয়, নিজেও খুব স্মার্ট, বলল, ‘এ কোনও অসুখ বিসুখ নয়, এ মাতা।’
(ফেসবুক থেকে নেয়া)